জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের (জানুয়ারী-মার্চ ২০২৪) এর ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন।
মো: শাহ আলম মিয়া বিসিএস ক্যাডারের ৩৪ তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী সচিব)। তিনি ১৯৮৬ সালে ৫ জানুয়ারী রংপুর জেলার এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রংপুরের ফরিদা বেগম উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৩ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। এর পর বামনডাঙ্গা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগী লাভ করেন।
মো: শাহ আলম মিয়া ২০২৩ সালের ১৫ মে নেত্রকোণা জেলার মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসাবে যোগদান করেন। মদনে যোগদানের পর তিনি অনুধাবন করেন, হাওর বেষ্টিত এ অঞ্চলের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ।
বছরের অর্ধেক সময় এ অঞ্চল পানিতে তলিয়ে থাকায় অধিকাংশ কৃষি ভূমিতে মাত্র একবার ফসল ফলাতে পারে। অনেক সময় ফসল ঘরে তোলার আগেই পানিতে তলিয়ে যায়। আবার মৎস্য ঘেরগুলোও প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠী বরাবরই থাকে উপেক্ষিত। হাওর বেষ্টিত এই এলাকায় গবাদি পশু পালন করাও কষ্টসাধ্য। আবার অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট ও পরিবহন গুলোতে হিজড়াদের চাঁদাবাজীতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।
তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে যোগদানের পর এ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়নে বেশ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা-ঘাট ও পরিবহন গুলোতে চাঁদাবাজী বন্ধ করতে সমাজে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর হিজড়া সম্প্রদায়কে সমাজের মূল স্রোাতধারায় ফিরিয়ে আনতে কফি হাউজসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দেন এবং হিজড়াদের নিয়ে ত্রি-নয়ন নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
ইতোমধ্যে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পেয়েছে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা। এখানকার হিজড়া সম্প্রদায় এখন আর সমাজের পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সদস্য নয়, তারা এখন সমাজের মূলস্রোতধারায় ফিরে উন্নত জীবন-মানের স্বপ্ন দেখছে।
প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন, প্রতিবন্ধী, অসহায় বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তাদের জন্য গ্রহণ করেছেন যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা সারাদেশে রোল মডেল হতে পারে। প্রভাবশালীদের দখলে থাকা সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত কৃষি জমি উদ্ধার করে প্রান্তিক কৃষক, ভূমিহীন, প্রতিবন্ধী, অসহায় বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তাদের মাঝে বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করেছেন। যাতে করে অবহেলিত প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠী কৃষি জমিতে ফসল ফলিয়ে নিজেদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
হাঁস-মুরগী পালনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ ও সংসারে সচ্ছলতা আনতে তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উৎসাহিত করেন। গ্রামের মহিলা জনগোষ্ঠীকেও তিনি একাজে সম্পৃক্ত করেন।
হাস-মুরগী পালন, ডিম উৎপাদন, ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো ও বাজারজাত করণে প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সহযোগিতার জন্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও যুব উন্নয়নকে নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
উপজেলার হাঁসখামারীদের জন্য কুঠুরীকোণা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ‘কুঠুরীকোণা মডেল’ নামের প্রকল্প গ্রহণ করেন এবং খামারীদের পরিচয়পত্র প্রদান করেন। সম্প্রতি তিনি উপজেলা চত্ত্বরের সৌন্দর্য্যবর্ধনের মাধ্যমে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন : সাত দিন পার হলেও চুরি মামলার মূলহোতা ভাঙ্গারী আলাল গ্রেফতার হয়নি
মোঃ সাকের খান